ইন্টার্ন গাইডলাইন পর্ব-৩ | Arif's Medical Blog

ইন্টার্ন গাইডলাইন পর্ব-৩

মেডিসিন সার্জারি গাইনী- আগে কোথায় প্লেইসমেন্ট নিলে/ পড়লে ভালো হবে? 

অনেকে মনে করে আগে মেডিসিন বা কঠিন প্লেইসমেন্ট দিয়ে শুরু করাটা ভালো হবে। শেষের দিকে ঝিমিয়ে যাবো সবাই। তাই শুরুতেই কঠিন প্লেইসমেন্ট দিয়ে শুরু করি। তাছাড়া পড়ার সময়ও পাবো। 

কিন্তু ব্যাপারটা আসলে কি আসলেই এমন? ইন্টার্নশিপের সময়টা আসলে কেমন যাবে তার সবকিছু নির্ভর করবে কোথায় আগে প্লেইসমেন্ট পড়বে তার ওপর না, বরং তোমার টার্গেট, গোল এবং সবথেকে বড় কথা মাইন্ডসেটের ওপর। এই ১বছরকে ফাঁকিবাজরা ব্যবহার করবে একভাবে, আর সিন্সিয়াররা আরেকভাবে। সুতরাং এই ১টা বছর ফাঁকিবাজরা কীভাবে কাটাবে আর সিন্সিয়াররা কীভাবে, এটার প্ল্যানিং দুইজনের দুইরকম হবে।

একেক ডিপার্টমেন্টে প্লেইসমেন্টের বেনিফিট একেকরকম। গাইনীতে অ্যাডমিশনের দিন ব্যতীত তেমন কোনো স্ট্রেসফুল ডে খুব বেশি থাকে না। বেশ ফ্রী টাইম পাওয়া যায়। এতে সুবিধা হলো তুমি হাসপাতাল সিস্টেমের সাথে ওরিয়েন্টেড হওয়ার সময় পাবে। ঐ সময়টাতেও তুমি পড়াশুনায় দিতে পারবে। 

আমার প্রথম প্লেইসমেন্ট গাইনী দিয়ে শুরু হয়েছিলো। আমি নিজেকে অ্যাডজাস্ট করার জন্যে খুব ভালো সময় পেয়েছিলাম। নিজেকে আরও ভালোভাবে ওরিয়েন্টেড এবং অ্যাডজাস্ট করতে আমি গাইনীর অন্য ইউনিটের সাথে অ্যাডমিশন করেছি। আমার কলিগদের হেল্প করেছি। ছোটখাটো যত হাতের কাজ আছে, সবকিছু আমি গাইনীর প্লেইসমেন্টেই আয়ত্ত্ব করে ফেলেছিলাম। 

রিল্যাক্স নাইট ডিউটি বা মোটামুটি ফ্রী দিনগুলোতে আমি ফাঁকে ফাঁকে মেডিসিন সার্জারির বিভিন্ন ইউনিটে গিয়ে অ্যাডমিশন করেছি। কলিগ, সিনিয়ররা কীভাবে সব ম্যানেজ করছে, কী কী ঝামেলায় পড়ছে সবকিছু অবজার্ভ করেছি, হেল্পও করেছি। 
ফলাফল হিসেবে আমার সার্জারি আর মেডিসিনেও প্লেইসমেন্টের শুরু থেকেই আমি নিজের বেস্টটা দিতে পেরেছি।

আর, ইন্টার্নশিপে এই ধরনের মানসিকতা কখনোই কাম্য না যে শুরুতে আমি চাঙ্গা থাকবো, শেষে গিয়ে ঝিমিয়ে যাবো। এটা কোনো ডাক্তারদের মানসিকতাও হতে পারেনা। 
ইন্টার্নশিপ একটা মাল্টি ফ্লেভারড জার্নি। পুরো একবছর তোমার প্লেইসমেন্ট একই জায়গায় থাকবে না। ৩-৪মাস পর পর মাদার বা বেসিক ডিপার্টমেন্টে রোটেশন হবে, এর মাঝে ব্রাঞ্চগুলোতে প্লেইসমেন্ট হবে। প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টই তোমার জন্যে একেকটা নতুন জার্নি। নতুন অভিজ্ঞতা। সুতরাং নতুন এনার্জি।
ডাক্তারদের লাইফ একটা ম্যারাথন রেইস। শুরুতে যত দ্রুত দৌড়াতে যাবে তোমার রেইস কমপ্লিট করার সম্ভাবনা তত কমবে। আবার রেইসের প্রতিটা মুহূর্তে তোমার গতি একরকম থাকবে, একরকম ভালোলাগা থাকবে- এরকমটা এক্সপেক্ট করাও বোকামি।

সুতরাং নিজেকে সবসময় এনার্জাইড রাখার চেষ্টা করো। প্রতিটি দিন নিজেকে নতুনভাবে ডিস্কভার করো। প্রতিদিন কীভাবে বেটার সার্ভিস প্রোভাইড করতে পারো, তার টার্গেট সেট করো, উপায় বের করো। 

যারা ইন্টার্নশিপকে কেবল ডিউটি, প্যারা, গরু খাটানো হিসেবে দেখে, আর যারা ইন্টার্নশিপকে শেখার এবং প্রফেশনালিজম বাড়ানোর জায়গা,  পেশেন্টদের বেটার সার্ভিস দেয়ার সুযোগ হিসেবে দেখে, তারা কখনোই একরকম হতে পারেনা।

এখন তোমার ইন্টার্নশিপ পিরিয়ডটাকে তুমি কীভাবে দেখবে, কীভাবে ইউটিলাইজ করবে, it's up to you.

Post a Comment

Previous Post Next Post