আমাদের বেশিরভাগের কমন ধারণা হলো, যেহেতু অমুক অনেক ভালো ও সুন্দর করে গুছিয়ে সাজেশন এবং অ্যাডভাইস দিতে পারে, অসাধারণ উপায়ে মানুষদের কনভিন্স করতে পারে তার মানে সে সবথেকে ভালো কাউন্সেলর।
এবং অনেকেই ভুলবশত মনে করে যে ইনবর্ন এই ট্যালেন্টগুলো থাকার কারণে তার সাইকিয়াট্রিতে ক্যারিয়ার করা উচিত। (বরংচ আমি মনে করি এই ট্যালেন্টের জন্যে তার মার্কেটিং, সেলস বা কর্পোরেট স্ট্র্যাটেজিতে ক্যারিয়ার করা উচিত। সেখানে সে আরও ভালো করতে পারবে)
অথচ সাইকিয়াট্রি বা সাইকোলজিতে কাউন্সেলিং সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। কাউন্সেলিং পুরোদস্তর একটি ট্রিটমেন্ট। সিম্পটোম্যাটিক না বরং কিউরিটিভ (অন্যদিকে সাইকোথেরাপি আরেকটু ব্রড এবং প্রিভেন্টেটিভ)।
আপনি মানুষের সব সমস্যার সমাধান করে দিতে পারেন।
আপনি মানুষকে খুব ইফেক্টিভ অ্যাডভাইস দিতে পারেন।
মানুষকে খুব সহজে কনভিন্স করতে পারেন।
আপনি মানুষকে নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকে সমস্যার সমাধান করে দিতে পারেন।
আপনি মানুষকে বলে দিতে পারেন যে, এগুলো এভাবে এভাবে করা উচিত এবং এগুলো উচিত না।
আপনি মানুষের যেকোনো সমস্যার কুইক সল্যুশন বের করে দিতে পারেন ।
আপনি এতোই এম্প্যাথিক যে, আপনি ক্লায়েন্টের সাথে ইমোশনালি ইনভলভ হয়ে যেতে পারেন।
ট্রাস্ট মি! এগুলোর একটিও কাউন্সেলিংয়ের ক্রাইটেরিয়া না!!!
অল্প কথায় বললে, কাউন্সেলিং হলো ডীপ এক্সপ্লোরেশন। অনেকটা একসাথে সিন্ধু না সেঁচে সিন্ধুর গভীরে গিয়েই মুক্তো বের করে নিয়ে আসার মতো। অন্ধকার, গভীর এবং ভয়ানক প্রাণীতে পরিপূর্ণ সেই সিন্ধু। সমস্যা থাকায় আপনার ক্লায়েন্ট গভীরে যেতে পারছেন না। তাই একসাথেই মুক্তো বের করে নিয়ে আসবেন, হেল্প করবেন কিন্তু তার কাছে মনে হবে যে পুরো কাজটা সে মূলত নিজেই সম্পন্ন করেছে। এরপর সে উপলব্ধি করতে পারবে যে, মুক্তো আনার ক্ষমতা তার নিজের মধ্যেই ছিলো।
আপনি ক্লায়েন্টের যত গভীরে যেতে পারবেন, ক্লায়েন্টের শরীর, মন, চারপাশ নিয়ে যত ডিপ ডাইভ করতে পারবেন, ইনভেস্টিগেট করতে পারবেন, আপনার কাউন্সেলিং তত বেশি ইফেক্টিভ হবে।
আর এই গভীরে গিয়ে হীরে নিয়ে আসার জন্যে প্রয়োজন মূলত তিনটে জিনিস-
এক্টিভ লিসেনিং স্কিলঃ ভালো কাউন্সেলররা কথা কম বলেন।
কোরিলেশন এবং ইনভেস্টিভেটিভ মাইন্ডসেটঃ শুধু কি ক্লায়েন্টের মনোজগতের আদ্যোপান্ত? ক্লায়েন্টের শারিরীক (ক্লিনিক্যাল), পারিবারিক, সামাজিক প্রত্যেকটা ডাইমেনশন আপনার এক্সপ্লোর করে ইনভেস্টিগেট করে এরপর প্রত্যেকটা ডেটা আপনাকে কোরিলেট করতে হবে।
ইফেক্টিভ কোয়েশ্চেনিং স্কিলঃ ভালো কাউন্সিলররা ক্লায়েন্টের আচরনের নিজস্ব ব্যাখ্যা না দাঁড় করিয়ে বরং সেগুলোর কারণ বের করার চেষ্টা করেন।
এমনকি একজন সাইকোটিক পেশেন্টের সাইকি এক্সপ্লোর করেও আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু বের করে নিয়ে আসতে পারবেন। তার সাইকোসিসের কারণ বের করে তার ভবিতব্য Psychosis aggravative factor/ precipitating/ perpetuating factor কে কমিয়ে নিয়ে আসতে পারবেন। কীভাবে এই সব করতে পারবেন, সেটাও কিন্তু এই কাউন্সেলিং এরই অংশ।
কাউন্সেলিং নিয়ে বিস্তারিত লিখার বা ডিস্কাস করার ইচ্ছে আছে আমার। সেখানে আমি কাউন্সেলিং নিয়ে যত বাস্তবতা, মিসকনসেপশন এবং আইডিয়াল কাউন্সেলিং কেমন হওয়া উচিত, কীভাবে কাউন্সেলিং করা উচিত, কেন উচিত এই সবকিছু নিয়ে সিরিজভিত্তিক আলোচনা করবো।